Header Ads

Header ADS

ব্যবসায়ীদের আধিক্য কেন মেয়র নির্বাচনে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে কেবল একজন রাজনীতিক। চারজন ব্যবসায়ী এবং অপরজন ব্যান্ডশিল্পী।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের আধিক্যের প্রবণতা ক্ষতিকারক। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকেও ব্যবসার উপায় মনে করেন। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম থাকায় জনসাধারণের চাওয়া-পাওয়া কম গুরুত্ব পায় ব্যবসায়ীদের কাছে।
কোনো কোনো নির্বাচন বিশেষজ্ঞ উল্টোটাও মনে করছেন।
মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) শাহীন খান ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ববি হাজ্জাজ ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন।
জাতীয় পার্টির শাফিন আহেমদ পেশায় সঙ্গীতশিল্পী। রাজনীতি ও সমাজসেবা পেশা কেবলই ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আনিসুর রহমান দেওয়ানের।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, তত সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনসেবা করার কথা, সেখানে ব্যবসায়ীদের আধিক্য বাড়ছে। স্থানীয় সরকার থেকে সংসদ, সব জায়গাতেই ব্যবসায়ীদের অধিক্য। এ প্রবণতাটা ক্ষতিকর।’
জাতীয়, স্থানীয় সরকারসহ সব ধরনের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তি বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটছে বলেও মনে করেন এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।
দিলীপ কুমার বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি যারা হবেন, তারা কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেই, তাতে অসুবিধার কিছু নেই। তবে ধারণা করা হয়, দিন দিন নির্বাচনগুলোয় অর্থ ও পেশিশক্তির বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যাদের অর্থবিত্ত আছে, তারা আগ্রহী হচ্ছেন নির্বাচনের দিকে।’
ব্যবসায়ীদের ভূমিকা পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে দিলীপ কুমার বলেন, ‘একসময় রাজনীতিকরা রাজনীতি করতেন। বড় বড় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ব্যবসায়ী, তারা বিভিন্নভাবে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। এখন ব্যবসায়ীরা নিজেরাই রাজনীতিকের জায়গায় চলে যেতে আগ্রহী।’
ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার সংকট তুলে ধরে দিলীপ কুমার বলেন, ‘পুঁজি বিনিয়োগ করে তা উসুল করার একটা প্রবণতা ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাকেই। সাধারণ রাজনীতিবিদ হলে মানুষের সঙ্গে যে সম্পৃক্ততা থাকে; ব্যবসায়ী হলে সেটা থাকে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যাপক মাত্রায় সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে সর্বসাধারণের অধিকারের বিষয়গুলো একটু কমই দেখেন তারা। ব্যতিক্রম থাকতে পারেন কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে অনেকে আনিসুল হকের কথা বলবেন। তিনি ভালো ভালো কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে সেটা ব্যতিক্রম।’
তবে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসাকে ভালোভাবেই দেখছেন আরেকজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টাকে কোনোভাবে দেখছি না। এখানে আইনগতভাবে তো কোনো অসুবিধা নেই। এতে কোনো দিক থেকেই কোনো অসুবিধা নাই। যেকোনো পেশার হতে পারে, নাগরিক হলেই হলো বাংলাদেশের। বিরূপ প্রভাব কেন পড়বে? বিরূপ প্রভাব পড়ার কী আছে?’
প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশের আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের সবধরনের তথ্য দেখে বুঝে নিতে পারেন, তারা কাকে ভোট দিতে যাচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে তারা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখেও প্রার্থীকে মূল্যায়ন করতে পারেন। উত্তর সিটির ছয় প্রার্থীর মধ্যে আতিকুল ইসলাম বিকম, ববি হাজ্জাজ এমবিএ, শাফিন আহেমদ স্নাতক, আনিসুর রহমান বিএসসি, আব্দুর রহিম অষ্টম শ্রেণি এবং শাহীন খান স্বশিক্ষিত।
প্রার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মামলাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উত্তর সিটির ছয় প্রার্থীর মধ্যে দু’জন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা চলমান এবং তিনটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর শাহীন খানের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টে একটি মামলা চলমান আছে।
ছয় প্রার্থীর মধ্যে ব্যাংক থেকে কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন কেবল আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া আব্দুর রহিমের স্ত্রীর নামে রয়েছে ব্যাংক ঋণ।
ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ায় ঢাকার এ সিটিতে মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.